দামে কম, গরমে আরাম
বর্তমানে কুমিল্লা মহানগরীর প্রায় অর্ধশত অভিজাত খাদি দোকানে খাদির বিভিন্ন সামগ্রী বিক্রি হচ্ছে। ঈদ, নববর্ষ ও পূজা উপলক্ষ্যে খাদির পাঞ্জাবি ও ফতুয়ার বেশ চাহিদাও রয়েছে। সাড়ে ৩০০ থেকে দেড় হাজার টাকায় খাদির পাঞ্জাবি পাওয়া যায়। ৪০০ থেকে ১ হাজার টাকায় থ্রি-পিস, ৭০০ টাকা থেকে ৮০০ টাকায় শাড়ি, ৮০ থেকে ২০০ টাকায় প্রতি গজ থান কাপড়, ৬০০ টাকা থেকে ৪ হাজার টাকায় বেড শিট, কাপড় ৩০০ থেকে ৬০০ টাকায়, শার্ট ৪০০ থেকে ৬০০ টাকায়, লুঙ্গি ২০০ থেকে ২৫০ টাকায় পাওয়া যায়।
কুমিল্লা নগরীর মনোহরপুর এলাকার খাদি কাপড়ের ব্যবসায়ী প্রদীপ কুমার রাহা জানান, সুতার মূল্যবৃদ্ধির কারণে বর্তমানে খাদি কাপড়ের দাম কিছুটা বেড়েছে। তবে ক্রেতাদের সুবিধার্থে এখনো খাদিসামগ্রী কুমিল্লা নগরীর বিভিন্ন দোকান থেকে যে মূল্যে পাওয়া যাচ্ছে, তা দেশের অন্য যে কোনো স্থানে দ্বিগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে। তিনি বলেন, দামে ও গুণমানে কুমিল্লার খাদির চেয়ে এত কম মূল্যে কোন ব্র্যান্ডের কাপড় পাওয়া যায় না। অথচ সরকারের পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে খাদিশিল্প মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারছে না।
খাদির নামে বাজে কাপড়ে বাজার সয়লাব
বিশুদ্ধ খাদি এখন বাজারে নেই বললেই চলে। শুধু চান্দিনা ও দেবীদ্বারের কিছু এলাকায় খাদিশিল্প এখনো টিকে থাকলেও অধিকাংশ তাঁতি পেশা পরিবর্তন করে অন্য পেশায় ঝুঁকে পড়েছেন। চান্দিনার কিছু তাঁতি ও কাটুনী বিভিন্ন বস্ত্র মিল থেকে ব্যবহারের অযোগ্য সুতা সংগ্রহ করে সেগুলো থেকে বেছে বেছে চরকায় সুতা কাটছেন। এই সুতা ও মিলের সুতার মিশ্রণে তৈরি হচ্ছে বর্তমান খাদিবস্ত্র। ফলে এখন আর চাইলেই আসল খাদি কাপড় পাওয়া যায় না। কর্মসংস্থান থেকে বঞ্চিত হচ্ছে হাজার হাজার দক্ষ পুরুষ ও মহিলা শ্রমিক। বন্ধ হয়ে গেছে গৃহস্থালি কাজের ফাঁকে বাড়তি আয়ের সুযোগ।
প্রতিদিন গড়ে একটি তাঁত থেকে তৈরি হয় সর্বোচ্চ ১২ গজ কাপড়। তাঁতিরা জানান, তারা বিভিন্ন মহাজনের কাছ থেকে ওজন ধরে সুতা আনেন এবং যত কেজি সুতা আনেন সে পরিমাণ ওজনের তৈরি কাপড় তাদের সরবরাহ করতে হয়। এজন্য মহাজন তাদের ১২ গজে মাত্র ১৮০ থেকে ২০০ টাকা দেন। তা থেকে শ্রমিককেও দিতে হয় একটি উল্লেখযোগ্য অংশ। ফলে তাদের লাভের খাতা থাকে শূন্য। এ অবস্থায় পৃষ্ঠপোষকতাহীন খদ্দরশিল্প হারিয়ে যাচ্ছে দ্রুত গতিতে। সুলভ মূল্যে সুতা ও রংয়ের অভাবে প্রকৃত তাঁতিরা সে সময় তাদের মূল পেশা বদল করতে বাধ্য হয় বলে জানান চান্দিনার বৃদ্ধ তাঁতি দেবেন্দ্র দেবনাথ।